স্বপ্নের ফাইনালে বাংলাদেশ

গ্যালারিতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শুধু দর্শক আর দর্শক। তাদের উত্তেজনা ও উন্মাদনার কোনো ঘাটতি ছিল না। মাঠে শাওন হোসেনরাও শ্রাবণের অঝোর ধারার মতো আক্রমণ শানিয়েছে। তবু ১-০ গোলের জয় নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হল স্বাগতিকদের। স্কোরলাইন দেখে ম্যাচে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল দলের প্রাধান্য বোঝা যাবে না। কিন্তু জয় জয়ই। সেটা ১-০ গোলে হোক কিংবা ১১-০ গোলে। রবিবাসরীয় এই জয়ের মাহাত্ম্য লাল-সবুজের জন্য অনেক বেশি। কেননা এই জয় বাংলাদেশকে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের ফাইনালে তুলে দিয়েছে। ফাইনালে বাংলাদেশ খেলবে ভারতের বিপক্ষে। দিনের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারত ১-০ গোলে নেপালকে হারায়। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার ফাইনালে খেলছে ভারত। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম সেমিফাইনালের ৫৪ মিনিটে একমাত্র জয়সূচক গোল করেন সাদ উদ্দিন হোসেইন। প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধের পাঁচ মিনিটে অচলায়তন ভাঙে।
ম্যাচটি শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকেল ৩টায়। বৃষ্টির দরুন এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয় খেলা। ভারি মাঠে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে বেগ পেতে হয় দু’দলকেই। বিরতির সময় দুই সাবেক ফুটবলার ইমতিয়াজ সুলতান জনি ও কায়সার হামিদ বিটিভির
অনুষ্ঠানে দুই উইং দিয়ে লম্বা পাসে আক্রমণের ওপর জোর দেন। কর্দমাক্ত মাঠের দরুন বল বারবার আটকে যায়। ছোট ছোট পাসে খেলাটা দুষ্কর হয়ে পড়ে।
ম্যাচের শুরু থেকেই দাপুটে ফুটবল খেলেছেন মামুনুল-এমিলিদের উত্তরসূরিরা। তবুও গোলের রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এরই মাঝে বিপত্তি! আফগানিস্তান পেনাল্টি পেয়ে যায় ৩৫ মিনিটে। সুযোগ হাতছাড়া করে তারা পোস্টের ওপর দিয়ে বল মেরে। বিরতির পর সৈয়দ গোলাম জিলানির শিষ্যরা তেড়েমেরে খেলে কোণঠাসা করে ফেলে প্রতিপক্ষকে। তারই পুরস্কার হিসেবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোল আদায় করে নেয়া। ৭৩ মিনিটে অফসাইডের দরুন গোল বাতিল না হলে বাংলাদেশের কিশোররা এগিয়ে যেতে পারত ২-০ ব্যবধানে। এরপরও সুযোগ এসেছিল ব্যবধান বাড়ানোর। রনির হেড ক্রসবারে লেগে বাইরে চলে সুযোগ নষ্ট হয়। ম্যাচের তখন ৮৭ মিনিট। একেবারে অন্তিমলগ্নে অবশ্য স্বাগতিকরা গোল হজম করা থেকে রক্ষা পায় গোলরক্ষক ফয়সালের দৃঢ়তায়।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কুচাই গ্রামের ছেলে সাদ হোসেন ম্যাচের ৫৪ মিনিটে করেন একমাত্র জয়সূচক গোলটি। আগের দুটি সেমিফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হলেও এবার নিজ মাঠে কিশোররা স্বপ্ন পূরণে সফল হয়েছে। সিলেট স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা মাত্র ২০ হাজার। তবে টিকিটের চাহিদা ছিল তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে টিকিট পেয়েছেন তারা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন। দলকে উৎসাহ দিতে সমর্থকরা বিভিন্ন প্লাকার্ড, ব্যানার ও জাতীয় পতাকা নিয়ে মাঠে আসেন। ম্যাচের শুরু থেকে বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে। অন্যদিকে আফগানিস্তান শুরুতে ছিল রক্ষণাত্মক। দ্বিতীয় মিনিটে প্রথম কর্নার পায় বাংলাদেশ। ম্যাচের ৮ মিনিটে বাংলাদেশের দুর্গে আক্রমণ চালায় আগফানিস্তান। অধিনায়ক অমিত হায়দার গোলও করে বসেন। তবে রেফারি অফ-সাইডের বাঁশি বাজালে গোল বাতিল হয়ে যায়। ১০ মিনিটে সাদ উদ্দিনকে অবৈধভাবে বাধা দেয়ায় ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন আফগান মিডফিল্ডার অমিত হায়দার। ১২ মিনিটে অধিনায়ক শাওনের বাড়িয়ে দেয়া বলে আফগান বিপদসীমায় ঢুকে পরেন সারোয়ান নিপু। তবে লিড নিতে ব্যর্থ বাংলাদেশ। ২৩ মিনিটে আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। সারোয়ান নিপুর বাড়িয়ে দেয়া বলে সাদ উদ্দিন গোল করতে ব্যর্থ হন। বাংলাদেশের ডি-বক্সে আফগান খেলোয়াড় আলী বাসিতকে অবৈধভাবে বাধা দেয়ায় পেনাল্টি পায় আফগানিস্তান। তবে পেনাল্টি মিস করে দলকে এগিয়ে দেয়ার নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করেন অমিত আলী। ৪৩ মিনিটে আফগানদের হয়ে আরও একটি সুযোগ নষ্ট করেন শের আহমেদ হামিদি। ৫৩ মিনিটে আফগান গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি নিপু।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর